২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে স্থানীয় লোকজনের হাতে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দুপুরের এই ঘটনার পর রাতে জুতার মালা ও এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

হেনস্তার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। হেনস্তাকারীরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সাথে বিরোধে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে আগে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। রোববার দুপুরে তাকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হেনস্তা করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকায় এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে আর এলাকায় আসবেন বলেও জানান।

এসময় একজনকে বলতে শোনা যায়— এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কি না? সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা কানু করজোড়ে ক্ষমা চান। ওই এলাকার প্রবাসী আবুল হাসেমকে বলতে শোনা যায়, “এই ছেলেটা ক্লাস এইটে পড়ে, তারেও মামলার আসামি দিছে। আমরা তো আওয়ামী লীগের সময় এলাকায় থাকতে পারিনি। আপনি বাকি ৮ বছর কই ছিলেন?” আপনি এখন এলাকায় থাকতে পারবেন না। এসময় অন্যরা বলতে থাকেন— “তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।”

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করেন। বিচার কার কাছে চাইবো? মামলা দিয়ে আর কী হবে? তারা সবাই জামায়াতের রাজনীতি করে। আমি আওয়ামী লীগ করলেও বিগত দিনে তাদের কোনও ক্ষতি করিনি। উল্টো আওয়ামী লীগের এমপির রোষানলে পড়ে ৮ বছর এলাকা ছাড়া ছিলাম।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করবেন না বলেও জানান। তবে রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আবারও তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দেবেন কি না বিষয়টি এখনও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে রোববার রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াতের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। জড়িতরা আমাদের কেউ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

blank

নিজস্ব প্রতিবেদক

https://dakgharnews.com

Related post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *