বাসনা সমূহ

আমরা ঝড়ের কাছে রেখে যাচ্ছি আমাদের ঠিকানা । আজকাল গিভ এন্ড টেক, টাকা বাড়াও, খ্যাতি বাড়াও, লাইক বাড়াও, ভিউজ বাড়াও, তিলেকে তাল করো, টাকাকে ডলার করো, এতো বাড় বাড়ন্তের মাঝে, মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, সহ্য, ত্যাগ, অপেক্ষা, একাত্মতা, একাগ্রতা, পরিশ্রম, শ্রদ্ধা, একতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতাও যে বাড়াতে হয় আমরা সেটাই ভুলে বসে আছি।
এখন তো হুঙ্কার ইজ পাওয়ার, টিচারকে চর কসালেই পাওয়ার, কাউকে অসহায় করে ফেললেই পাওয়ার, কোনো নারীর সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিলেই পাওয়ার, চারদিকে এতো পাওয়ারের ফুল দেখতে দেখতে, হৃদয়ে তাজা ফুলের বাগান আমরা হারিয়ে বসে আছি। লজ্জাকে অতিক্রম করে আমরা সাবলম্বি হচ্ছি, কাপড় খুলে ক্যামেরার সামলে দাঁড়াতে পারাকে আমরা নারীর সাহসিকতা বলছি, রিলস, টিকটক, স্ন্যাপে মুখ ভেংচি কাটাকে আমরা অভিনয় দক্ষতার পদক দিচ্ছি,
সংসার-সন্তান, দ্বায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে বাঁচা পুরুষকে বলছি সংস্কৃতি চর্চার ধারক। হাতে-পায়ে এতো অলসতা, স্লিমিং পিল খেয়ে সিক্সপ্যাকের স্বপ্ন নিয়ে ওভার স্লিপার বলে ইয়ান টেনে কথা বলছি। বয়সের সাথে আমাদের ভিমরতি বাড়ছে, কচি কাঁচা দেখে ইনবক্সে ফ্লাট করছি, যখন ভাবি এতো গোল্লায় যাওয়া সময়ে আমি সেকেলে আছি, থাকতে পেরেছি এটাই আর্শিবাদ, দেদারসে আমাকে ঠকাচ্ছে মানুষ, ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে, সখের অভাব দেখিয়ে, মৃত্যু সজ্জার নাটক সাজিয়ে, অধিকার, উচিতবলে, ধর্মীয় অনুশাসনের ভয় দেখিয়ে, আমাকে ঠকাচ্ছে। বা
ভাবছে আমাকে বোকা বানিয়ে পার পেয়ে গেল, একদমই না, আমি মুচকি হেসে মনে মনে বলি, সব বুঝেছি, জেনেছি, কিন্তু কিছু বলবো না। থাক বোকাই ভালো,
আমি সরিয়ে নেই নিজেকে, আমার তেলের বাটি আর বাটারের চাক আমি কারও সাথেই শেয়ার করি না, কোনো মালিশ তোষামদী আমার সয় না, মিথ্যা মিথ্যি প্রেম, আবেগ, সহযোগিতা আমি বুঝতে পারি, ওসব এক একটা সাপের ঠোকর, আমার ছোট বডিটার ছোট পরিচয়টা, ছোট মনটা, ছোট স্বপ্নটার টেককেয়ার আমি খুব ভালো করতে পারি। আমি শান্তি প্রিয়, প্রশান্তি প্রিয়, আমার কোনকিছুতেই তাড়া নেই, কম্পিটেশনের বালাই নাই, যা আছে এটুকু আমার অর্জন, এক ফুটো কড়ির জন্য আমি কারও কাছে দায়ী নই, গিভিং মেন্টালিটির মানুষ, দিতে পারলে কারও জন্য কিছু করতে ভালো লাগে, পাওয়াটা নিয়ে আমার ভাবনা আসে না। পেট জুড়ে অভিমান, কিন্ত ক্ষমা করতে পারি, ক্ষমা করে সরে যাই। উপর চালাকি, লোভ, এসবের কোনো বালাই নেই, এজন্য আমার বন্ধু কম, আমার সাথে টিকে না, মানে মনে মনে একমন হয় না, উদ্দেশ্যজীবী হলে তো সটকে পড়ে, ডিজায়ার ফুলফিল হলেই!
আমি যাকে ভালোবাসি উন্মাদের মতো বাসতে পারি, আর ঘৃনা করলে নাম ধরে ওয়াক থু বলে সরে যাই! এটাই আমি।
জীবনে যা কিছুই করি না কেনো, নিজেকে খুশি রাখার কারণ গুলো অন্য কারো মধ্যে খোঁজার চেষ্টা করি না ভুল করেও না। জীবনে কখনো কারো উপর এক্সট্রিম লেভেলের নির্ভরশীল হইনি বলে আমার এক্সপেকটেশন ফুলফিল না হলে মনখারাপ হয়না।
আমি মাঝে মাঝে খুব অভিযোগ করি আমার পার্টনার এটা বোঝে না, ওটা করে না, এটা করে কেন, ওটা করে কেন, একদিন ভাবলাম আমি নিজেই তো আমার নিজের মতি গতী বুঝে উঠতে পারি না, আজ পাবনা, তো কাল পাটনা, বেচারাকে কি দোষ দেবো। থাক যেমন আছে, যা করে বলে খেয়ে করে না করে বিন্দাস থাকলে থাক! বলেছি জি লে ভাই আপনা জিন্দেগি, ঐ ভাত-ডালটা যোগান দিলেই হলো, মোটা কাপড়টা আমি সেলাই করে পরবো। বাচ্চাদের বলেছি সুখ করে নাও এবেলা কপালে কি জুটবে কে জানে, অলস না রাক্ষস আল্লাহ মালুম। যা করতে, খেতে, দেখতে মন চায় তাই করো, বাবা মায়ের ঘাড়ে চেপে। তোমাদের বোডির ভার তোমাদের, চিন্তার ভার তোমাদের, সামনের দিকের টাকা কড়ি তোমাদের, যা করে আনন্দ পাও সেটাই পেশা করে নিও, মনে আনন্দ নিয়ে জীবন পার করতে পারবে, কোয়ালিটি দেখো কোয়ান্টিটি না, হিউজ না হিসেব রাখার মতো জীবন যাপন করো, সুখ পাবা, তোমাদের মনের স্বপ্নের মালিক তোমারা, চাইলেই আকাশটাকে সামিয়ানা করে গাছের নিচে শুয়ে আন্নাকারোনিনা পড়তে পড়তে পৃথিবীর সেরা সুখিজন ভাবার শক্তি তোমাদের আছে।
কারও সাথে “বিফ” রিলেশন করে নিজেকে “পুকি” ভাবার মতো বোকা হবে না। আপন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সংস্কার, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, ট্রেডিশনাল খাবার, পোশাককে কখনো ছোট করবে না। মানুষের অস্তিত্বই বেঁচে থাকে আপন ঐতিহ্যের মাঝে !
আর জীবনে একটা শব্দ বলতে শিখবে সেটা হলো “না” ব্যাস তোমরা ভাল থাকবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রোগ্রামার, মোটিভেশনার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, আর্টিষ্ট, অভিনেতা, হওয়া বড় কথা না, বড় হলো তোমার একটা হাইয়েন কোয়ালিটির সওল আছে কিনা, নিজের যতটুকু আছে সেটাই বলবে, আমার অমুক তমুক এই সেই ইত্যাদির পরিচয় এড়িয়ে যাবে।
অন্যের চোখে তোমাদের ত্রুটিগুলোর মাঝে যখন তোমাদের গুণগুলো খুঁজে পাবে না তোমারা কষ্ট পাবে না, কারণ ওরা গুণবিচারী না দোষধারী। ফাইনানসিয়ালি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যাতে তীব্র মুড সুয়িংয়ে নিজেকে ট্রিট দিতে পারো, সাবলম্বি মেয়েদের সখ অপূর্ণ থাকে না কখনো।
জীবন মানেই একশন, ব্রুটালিটি, ভায়োলেন্স।
আমাদের জেনারেশন ইয়ে জিন্দেগি উসিকি হ্যায়, জো কিসিকা হো গয়া পেয়ার হি মে খো গয়া । জো দিল ইয়াহান ন মিল সাকে, মিলেঙ্গে হমারে জাহান মে খিলেঙ্গে হাসরতোঁ কে ফুল জা কে আসামান মে ।” এই গানের মতোই, আশার মুলো ঝুলিয়ে রেখে আমাদের ভোলায়, পরিবার, সমাজ, প্রেমিক, সবাই।
ছোট একটা গল্প শেয়ার করছি ফরাসি লোকগাথায় এটি একটি তাৎপর্যময় গল্প। গল্পটির নাম “Mouton De Panurge বা পানোর্জের ভেড়ারপাল”।
ফরাসী ভদ্রলোক পানোর্জ নদী পার হতে নৌকার যাত্রী হয়। নদীটা বেশ স্রোতস্বীনি। একই নৌকায় যাত্রী হিসাবে ওঠে ডেনডুনো নামক এক মেষ ব্যবসায়ী। তার সাথে অনেক মেষ। ডেনডুনো খুবই মুনাফা আর অর্থলোভী ব্যবসায়ী। মানবতাবোধ, মহত্ত্ব ইত্যাদি থেকে সে যোজন যোজন দূরে। তার জীবনের সমস্ত কিছু শুধু অর্থ আর মুনাফা দিয়ে ঠাসা।
নৌকাটি যখন নদীর মাঝপথে ঠিক এমন সময় পানোর্জ এবং ডেনডুনোর মধ্যে বেশ বাকবিতন্ডা হয়। পানোর্জ প্রতিজ্ঞা করে সে মুনাফালোভী ডেনডুনোকে আজ একটা কঠিন শিক্ষা দিবে।
পানোর্জ ডেনডুনোর কাছ থেকে বড় একটা মেষ বেশ উচ্চমূল্যে কিনে নেয়। মেষটিকে দেখেই মনে হচ্ছিলো এই মেষটিই মেষদলের দলপতি। অধিক মুনাফা পেয়ে ডেনডুনো খুবই খুশি। এরপর নদীর মাঝামাঝি গেলে, পানোর্জ মেষটির শিং ধরে শক্তভাবে টেনে নৌকার এক প্রান্তে নিয়ে যায় এবং মাঝ নদীতে ফেলে দেয়। দলপতি মেষকে অনুসরণ করতে গিয়ে অন্যান্য মেষগুলোও একের পর এক নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ডেনডুনো এটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। ঘটনার আকস্মিকতায় সে পুরোই হতভম্ব হয়ে যায়।
সে নৌকায় এদিক ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। একটাকে রক্ষা করতে গেলে আরেকটা নদীতে ঝাঁপ দেয়। ডেনডুনো চেষ্টা করে অন্ততঃ একটা মেষকে রক্ষা করতে। শেষ মেষটি যখন নদীতে ঝাঁপ দিতে যায়। সেটাকে ধরার জন্য সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এবং একেবারে উন্মাদের মতো সে নিজেও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গল্পটি থেকে কি শিক্ষা পেলেন? জানাবেন।
জীবনে এতো এতো বাড় বাড়ন্তে দরকার নেই, প্রকান্ড সবসময় ভয়ঙ্কর প্রলয় প্রলুব্ধ ।
অনেক ধনী, অনেক বিখ্যাত মানুষ অনেক নিচে তাকাতে পারে না, তাই সাহায্য সহযোগিতা করলেও আদতে পরিসংখ্যান তাদের কাছে। গরীবের দেয়া একটা রুটি আর একটা দিন হীনের কাছে অনেকখানি।
অল্পের মাঝেই বিপুলা থাকা যায়, মনের প্রশান্তি ইহকালের স্বর্গ।
লেখক: নাজমীন মর্তুজা