১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘বেঈমান’ শুনে আমি হাসি মুখে গ্রহণ করি: সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

‘বেঈমান’ শুনে আমি হাসি মুখে গ্রহণ করি: সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

বাংলাদেশ কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর যোগ দেয়া নিয়ে voiceof71.com এর সাথে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে যা বলছিলেন তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন -সীমান্ত বাঁধন চৌধুরী

দীর্ঘদিন সরকার বিরোধী আন্দোলন করে হঠাৎ নির্বাচনে গেলেন। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন!

-এ বিষয়টার উত্তর পেতে হলে আপনাকে একটা নাতিদীর্ঘ ব্যাখ্যা দিতে হবে। কিন্তু সে-সময় আপনার নাই। তাই অতি সংক্ষিপ্ত ভাবে বলবো, ২০০৮ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, ২০১৪ নির্বাচনে অংশ নেই নাই বিএনপি জোটের সিদ্ধান্তে। বিশ দলীয় জোট। ১৮র নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আবারও জোটের সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট  নামে একটি জোট গঠিত হয়েছিল। বিশ দলীয় জোট। মূল সেন্টারে রাখা হয়েছিল ঐক্য ফ্রন্টকে। আমাদেরকে কাগজের মার্জিনে রাখা হয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফল আপনারা সবাই জানেন। ১৮র নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি এবং বিশ দলীয় জোট ক্রমান্বয়ে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে।

এরপর ২২ সালের ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আন্দোলনের একটা আইকনিক দিবস ছিল। এরপর আরও অনেক সমাবেশ হয় কিন্তু আমরা সেটাকে ক্যাশ করতে পারিনি। সর্বশেষ ২৩সালের ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ পন্ড।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য হবে বলে মনে করেন?

-হবে এই গ্যারান্টিও দেবো না, হবে না তাও বলবো না। আমি সরকার কর্তৃক, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেয়া প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রাখছি। যদি দেখি হয়েছে তাহলে বলবো হয়েছে! যদি দেখি হয় নাই, বলবো হয় নাই।

যে আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেন, যদি আশা ভঙ্গ হয়?

-ভঙ্গ হলে হবে! পৃথিবীতে শত কোটি মানুষের আশা ভঙ্গ হয়, পূরন হয় দৈনিক। এজন্য তো পৃথিবী আটকে থাকে না। আমার চেষ্টা পার্লামেন্টের ফ্লোরে দাড়িয়ে জনগনের দুঃখ কষ্টের কথাটা বলা। যে বক্তব্যটা ২০/২৫ বছর ধরে দিয়ে আসছি বেসামরিক পর্যায়ে, টকশোতে, পত্রিকার কলামে, রাজপথের আন্দোলনে, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির নিচে।

কেমন নির্বাচনকে আপনি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন বলবেন?

-গ্রহনযোগ্য নির্বাচন বলতে যেখানে অনেকগুলো প্রার্থী থাকবে, সবাই চেষ্টা করার সুযোগ পাবে, সবাই সবার মতামত দিতে পারবে। “আপনি যেটা জিজ্ঞেস করেন নাই, করার জন্য উশখুশ করছেন সেটা হলো, বড় একটি রাজনৈতিক দল না এলে কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে?  উত্তর হলো, একটি বড় রাজনৈতিক দল না এলে একটি শূন্যতা থেকে যায়। যা অটোমেটিকলি পূরণ হবার কথা না। এটা মেনে নিয়েই আগাতে হয়। দুর্ঘটনায় কারো হাত কাটা গেলে অসম্পূর্ণ শরীর নিয়ে সে বিবাহ সাদীও করে, সংসার চাকরিবাকরিও করে। বসে থাকে না।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই যে একটা বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে, আসলে আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার আর কি কোনো সুযোগ সম্ভাবনা আছে? 

-না এটা আমি কোনো মন্তব্য করবো না। কারণ এটা সংবিধানের বিষয়, আইনের বিষয়। সুতরাং যা মন্তব্য করার আগে করে ফেলেছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে বেঈমান, মীরজাফর বলা হচ্ছে। বিষয়টা কীভাবে নিচ্ছেন?

– প্রচন্ড সমালোচনা হচ্ছে। আমি হাসি মুখে গ্রহন করি কারন; সমালোচনা হচ্ছে মত প্রকাশ। এ স্বাধীনতা সবার রয়েছে। বিএনপি এবং বিশ দলীয় জোটের সাথে যখন ছিলাম তখনও মানুষ বলতো, আপনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে রাজাকার বেঈমানদের সাথে কেন? আবার এখনও বেঈমান বলছে। আসলে ঈমানটা কোথায়? আর আমি যাবোটা কোথায়?  হাসি…

কল্যান পার্টি তাহলে জাতীর কল্যানে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে?

– এ ছাড়া আমাদের আর কোনো লক্ষ্য নাই।

নির্বাচন হয়ে গেলে সংকট নিরসন হবে বলে মনে করেন?

-হওয়ার চেষ্টা মানুষকে করতে হবে। দেশে তো একটা সরকার লাগবে। তা বৈধ বলেন আর অবৈধ বলেন, গ্রহণযোগ্য বলেন আর অগ্রহণযোগ্য বলেন, সরকার লাগবে। এটা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন তা দেশের মানুষের উপর নির্ভর করবে। আমার একার উপর না।

কোন বিশ্বাসে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?

– ২০২৩ সালের আমার বিশ্লেষণ বলছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবার আসছে না। আগামীতে কবে আসবে তাতো জানিনা। আমার সামনে দু’টো রাস্তা খোলা ছিল, চুপ করে থাকা নয়তো পার্লামেন্টে যাবার সুযোগটি গ্রহণ করা। পার্লামেন্টে যাওয়ার উদ্দেশ্য দশটি লোকের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে বলতে পারা। মরে গেলেও যেটা রেকর্ডেড থাকবে।

আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় অনেকে ব্যাথিত হয়েছেন। তাদের জন্য কিছু বলবেন?

-আমি তাঁদের মনের কষ্ট লাঘবের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করতে বলা ছাড়া এই মূহুর্তে কিছুই বলতে পারবো না। যারা বেঈমান বলছেন, গালিগালাজ করছেন অপেক্ষা করেন, এই লোকটা আপনাদের পাশে থাকে কি না।

তারমানে মানুষের কথা বলতেই নির্বাচনে যাচ্ছেন?

-আর তো কোনো কারণ নাই। ৩০/৪০ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার জন্য পার্লামেন্টে যাবো নাকি!  বীর প্রতীক ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দেন মেম্বার অব দ্য পার্লামেন্ট। আমি ১৪ সালে সরকারের আহ্বানে যাই নাই, ১৮ সালে জোট ছাড়ি নাই। আজকে আমাকে লক্ষ লোক গালি দিচ্ছেন, তখনতো ধন্যবাদ দেন নাই। কারণ ধরেই নিয়েছিলেন আমি আপনাদের সম্পত্তি। পৃথিবীটা বড় বিচিত্র। মহা বিচিত্র। বেঁচে থাকা মুস্কিল। আমি কোন দিকে যাবো?  হাসি……।

আমি মনে করি, জাতির এখন ক্রান্তিকাল। ৫৩ বছরেও এরকম সময় আর আসেনি। এই ক্রান্তিকালে কাউকে না কাউকে পার্লামেন্টে দাড়িয়ে কথা বলতে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করছি।

আরও আগে ভাবেননি কেন?

– ভেবেছি। সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি জোটের প্রতি, বেগম জিয়ার প্রতি আনুগত্যে থেকে গিয়েছি। বাট ডিডনট গিভ মি এনি রেজাল্ট। ১৪ আন্দোলনে পার্লামেন্ট ঠেকাতে পারেন নাই, ১৮র নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে নির্বাচনে চলে গেলেন। আমাদের নিলেন না। তারপর ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আপনাদের ভরাডুবি হলো। আমাদের মনেও দুঃখ আছে। তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে হলে কোনো না কোনো একটা সময় আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে! এখন কি আমি ৫ বছর আরও লেগে থাকবো? নাকি আমি বিকল্প চিন্তা করবো।

আমি বিকল্পটাই নিয়েছি।

*ধন্যবাদ আপনাকে।

-আপনাকেও ধন্যবাদ।

blank

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

Related post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *